আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু পেতে চাই । গাড়ি, সুন্দর বাড়ি, উন্নত খাবার ইত্যাদি । আমাদের সব আকাঙ্ক্ষা কিন্তু চাহিদা নয় । অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয় । যেমন- ১. কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা, ২. ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্য, এবং ৩. অর্থ ব্যয় করে দ্রব্যটি ক্রয়ের ইচ্ছা। সুতরাং ক্রেতার একটি পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে কেনার আকাঙ্ক্ষা, সামর্থ্য এবং নির্দিষ্ট মূল্যে দ্রব্যটি ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলে তাকে অর্থনীতিতে চাহিদা (Demand) বলে ।
চাহিদা বিধি
তোমার মা তোমার বাবাকে বাজার থেকে ইলিশ মাছ আনতে বললেন । বাজার থেকে এসে তোমার বাবা বিরক্তির সাথে বললেন, ইলিশ মাছের দাম বেশি তাই কেনা সম্ভব নয়। অর্থাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় তোমার বাবার কাছে ইলিশ মাছের চাহিদা নেই বা কমে গেছে । আবার একদিন তোমার বাবা হঠাৎ দুটি ইলিশ মাছ নিয়ে বাড়ি এলেন এবং হাসিমুখে বললেন আজকে ইলিশ মাছের দাম কম, তাই দুটি মাছ নিয়ে এলাম ৷ অর্থাৎ চাহিদার সাথে দামের একটি ঘনিষ্ঠ বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে ।
অতএব চাহিদা বিধি বা সূত্র বলতে আমরা বুঝি “অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যের দাম কমলে তার চাহিদার পরিমাণ বাড়ে এবং দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে।” [দাম (1) - চাহিদা (↓) আবার দাম (↓)-চাহিদা (1)]। দামের সাথে চাহিদার এরূপ বিপরীত সম্পর্ককে চাহিদা বিধি বলে । অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত বলতে এখানে বোঝানো হচ্ছে, ক্রেতার রুচি, অভ্যাস ও পছন্দের কোনো পরিবর্তন হবে না এবং ক্রেতার আয় ও বিকল্প দ্রব্যের দাম অপরিবর্তিত থাকবে ইত্যাদি ।
চাহিদা সূচি থেকে চাহিদা রেখা অঙ্কন
চাহিদা বিধিতে আমরা দেখেছি দামের সাথে চাহিদার বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান । অর্থাৎ দ্রব্যের দাম বাড়লে চাহিদার পরিমাণ কমে, আবার দ্রব্যের দাম কমলে চাহিদার পরিমাণ বাড়ে। এ ধারণাটি যখন সূচির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে চাহিদা সূচি বলে । অতএব, বলা যায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন দামে কোনো দ্রব্যের যে বিভিন্ন পরিমাণ চাহিদা হয়,তা যে তালিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়,তাকে চাহিদা সূচি বা চাহিদা তালিকা বলে ।
চাহিদার পরিমাণ (একক)সূচিতে দেখা যায়, কোনো দ্রব্যের প্রতি এককের দাম ৮ টাকা হলে একজন ভোক্তা ৪ একক দ্রব্য ক্রয় করে । দাম কমে ৬ টাকা, ৪ টাকা ও ২ টাকা হলে চাহিদা বেড়ে যথাক্রমে ৮ একক, ১২ একক ও ১৬ একক হয় । এভাবে চাহিদা সূচির মাধ্যমে দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক দেখানো হয়েছে ।
উপরের এ চাহিদা সূচি থেকে আমরা চাহিদা রেখা অঙ্কন করতে পারি ।
৩৩ নং পৃষ্ঠার রেখাচিত্রে ভূমি অক্ষে বা OX অক্ষে চাহিদার পরিমাণ ও লম্ব অক্ষে বা OY অক্ষে দ্রব্যের দাম দেখানো হয়েছে । দ্রব্যের দাম যখন ৮ টাকা তখন চাহিদার পরিমাণ ৪ একক। এখন OY অক্ষের ৮ সূচক এবং OX অক্ষের ৪ সূচক বিন্দু থেকে দুটি লম্ব অঙ্কন করলে তারা পরস্পর Q বিন্দুতে মিলিত হয়। এভাবে R, S ও T বিন্দুতে যথাক্রমে ৬ টাকায় ৮ একক, ৪ টাকায় ১২ একক এবং ২ টাকায় ১৬ একক দ্রব্যের পরিমাণ নির্দেশ করা হয়েছে । এবার Q, R, S ও T বিন্দুগুলোকে যোগ করলে আমরা DD রেখা পাব। এই DD রেখাই চাহিদা রেখা । DD চাহিদা রেখার বিন্দুগুলো দ্রব্যের বিভিন্ন দামে চাহিদার বিভিন্ন পরিমাণ নির্দেশ করছে ।
এভাবে আমরা চাহিদা বিধি অনুযায়ী চাহিদা সূচি থেকে চাহিদা রেখা অঙ্কন করতে পারি । উল্লেখ্য, আমরা এখানে স্বাভাবিক দ্রব্যের চাহিদা রেখা অঙ্কন করেছি ।
আরও দেখুন...